ব্রাত্য ক্ষত্রিয় এবং বেদ
– সুজন বর্মণ
[রায়ডাক,
দেবীপূজা সংখ্যা–১৫, ২০১৬, ছেও বিশেষ]
মঙ্গলাচরণ : [ ম.-1.0]
রাজবংশী জাতিতত্ত্বর উপরা জমা হয়া আছে ভালেগিলা অপবাদ, অপমান, অপন্যাল্টা, অপপ্রচার। ব্রিটিশলার দৌলতত্ আধুনিক শিক্ষার আলো কলিকাতাত আগোত পড়াতে অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতিকাত আলোচনা–গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয় কলিকাতা। ঐ বাদে বৈদেশী লেখকলার পল্লবগ্রাহীতা আর কলিকাতার ভাৱনা কল্পনা অপন্যাল্টা অপপ্রচার আর ঈর্ষান্বিত ইতিহাসের ঢেউয়োত তলে যায় রাজবংশীর মূল ইতিহাস। “রাজবংশীর ইতিহাস উদ্ধার করা কঠিন”১, এই মন্তব্য করি রাজবংশীলাক কোচ, কিরাত কয়া হাত ধুইয়া উঠি বইসে বহু পাণ্ডিত্য। সৌরিন্দ্র কুমার ঘোষ কইছে- ‘ রাজবংশীদিগের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না’।২
আর জানা যায় না বুলি উমরা কোচ’ ‘কিরাত’ মন্তব্য করির নাই ছাড়ে। তবে মার্টিন কইছে, ‘সৌগ রাজবংশী কোচ নোয়ায়”; ‘কোচ’ একটা প্রথাগত পরিচয় হয়া গেইছে।৩ ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দত জনগণনাত রাজবংশী আর কোচ দোসরা জাতি হিসাবত দেখা হয়। কিন্ত্তুক ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দত রিজলীর The Tribes and Castes of Bengal প্রকাশের নগে নগে ১৮৯১ খ্রী:
লোকগণনাত রাজবংশী আর কোচক এক করি দেখা হয়। সেই থাকি সূচুনা হয় প্রতিবাদের। হরমোহন রায় খাজাঞ্চির দ্বারায় তৈয়ার হয় ‘রংপুর ব্রাত্যক্ষত্রিয় জাতির উন্নতি বিধায়নী সভা’। ঠাকুর পঞ্চানন এই ব্রাত্যক্ষত্রিয় আন্দোলনোক যুগান্তকারী আন্দোলোনোত পরিণত করে এবং ব্রাত্যলা ‘ব্রতচ্যুত’, এই প্রচলিত ইতিহাস মানিয়ায় প্রায়শ্চিত্তর বিধান গ্রহণ করি ক্ষত্রিয় হায়া ওঠে। বৈদিক আমলত ব্রাত্য মানে ব্রতময়; আর পৌরাণিক
আমলত সেইটার বিকৃতি হয়া ‘ব্রতচ্যুত‘ হয়।
রাজবংশীলা ‘ব্রতচ্যুত’, অবৈদিক– পৌরাণিক ইতিহাসের এটা একটা ডাঙর বৈদিক বিকৃতি। রাজবংশী অধিকারী
বৈষ্ণবলা থায়ীভাৱত পৈতাযুক্ত। তেওঁ, রাজবংশীলা ব্রতচ্যুত– এই অর্থতে বিদগ্ধ
পণ্ডিত ঠাকুর পঞ্চানন উমার সেই কালের পরিস্থিতিত প্রচলিত ইতিহাসক মানি নিয়ায় বহু পণ্ডিতের মত
নিয়া সমাজক পতিত অবস্থা থাকি উদ্ধরা করিছে, সাবিত্রি মন্ত্র প্রদান করিছে।
আজিকার অবস্থাত আমরা ঠাকুর পঞ্চাননের
ঘাটা ধরিয়ায় আরো গহীন ভাৱত ভাবিমু। ‘ব্রাত্য‘ – বৈদিক ইতিহাসের
এক গুরুত্বপূর্ণ অভিধা। এই ‘ব্রাত্য‘ অভিধা মানে ‘ব্রতচুত‘ কয়ায় হাত গোটেয়া বসি থাকা
না যায় বুলি মোর ধারণা। এই ব্রাত্য শব্দর বৈদিক অর্থ কী? পৌরাণিক কালত ক্যানে এমুন
বিকৃতি! সেইলা আলোচনা করা দরকাল।
‘কামতাপুরী
অভিধান‘ করির সমায় “ব্রাত্য” মানে প্রচলিত অর্থৎ “সংস্কারহীন” লেখির যায়া মানি নিবার নাই পাং, এটা কেমুন অর্থ হৈল! উয়ারে গহীন ওণাষের
নাতিজা আজিকার এই আলোচনা ‘ব্রাত্যক্ষত্রিয় আরো বেদ’ ।
ব্রাত্যর প্রচলিত ব্যাখ্যা : [ ব্রা .– 2.0]:
‘ব্রাত্য’ শব্দর প্রচলিত ব্যাখ্যা একেবারে ব্যাকরণহীন, এবং বেদহীনও। প্রচলিত ব্যাখাত ‘ব্রাত্য’ মানে ব্রত থাকি চ্যুত [ব্রতাত সমুহাত চ্যুয়তে যৎ]। মনু সংহিতা মতোত কিছু মানষি ব্রতচ্যুত হয়া ব্রাত্য বুলি জানাজাত হইছে বুলি প্রচার পাইছে। সেইটা এটি আলোচনা করা দরকাল। মনুসংহিতার পাছত
লেখা অমরকোষত–ও ঐ একে
বেদবিরুদ্ধ ব্যাখ্যা:
“ব্রাত্য: সংস্কার বিহীন:” [ব্রাত্য হইলেক সংস্কার বিহীন ব্যাক্তির নাম]।
আমরা মনুসংহিতার ব্রাত্য সংজ্ঞা নিয়া আলোচনা
করি:
অত ঊর্ধং ত্রয়োহপ্যেতে যথাকালমসংস্কৃতা:
সাবিত্রিপতিতা ব্রাত্যা ভবন্ত্যার্যবিগর্হিতা:।।৩৯
নৈতৈরপূতৈর্বিধিবদাপদ্যপি
হি কর্হিচিৎ।
ব্রাহ্মান যৌনাংশ্চ সম্বন্ধানাচরেবেদ্ ব্রাহ্মণ:
সহ।।৪০, ৪
[এই তিন বর্ণর মানষি(ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,
বশ্য) যদি উক্ত নির্দিষ্ট কালের মধ্যে উপনয়ন গ্রহণ করি সংস্কৃত না হয়, তা হইলে
ভ্রষ্ট হয়া আর্য সমাজে নিন্দিত হয়; এবং ব্রাত্য কওয়া হয়। এই ব্রাত্যলা যদি শাস্ত্রর
নিয়ম অনুসারত প্রায়শ্চিত্ত না করে তা হইলে আপতকালতও বামুন উমাক নিয়া বেদ অধ্যয়ন
করাবে না, অথবা কইনা দানের নাখান বিয়াও কার্য করিবে না।]।
অর্থাৎ বামুন ক্ষত্রিয় বশ্য– যে কাহো সমায় মতো পৈতা
গ্রহণ না করিলে ব্রাত্য হবে। অর্থাৎ পতিত হবে; উমার প্রায়শ্চিত্ত করা খাবে। নাইলে
সমাজত মর্জাদা পাবে
না। ব্রাত্য শব্দর অর্থ যাই হউক না ক্যানে মনু সংহিতার উক্ত শ্লোকের ব্যাখ্যা
অনুযায়ী এইটায় বুঝায় যে, যায় ঠিক সমায় কালত ব্রত গ্রহণ না করে অর্থাৎ পইতা না নেয়
তায় পতিত হয়; আর এই পাতিত্য থাকি উদ্ধারের বাদে উয়াক প্রায়শ্চিত্য করা নাগে। ইমরা
বামুনও হবার পায়, ক্ষত্রিয়–ও হবার পায়। বৈশ্যও হবার পায়। সুতরাং ইয়ার মাঝত এককালের
ক্ষত্রিয়ত্ব বা ব্রাহ্মণত্ব আছেকে। সুতরাং ব্রাত্যত্ব সাময়িক ব্যাপার। ওটা
জাতিতত্বগত কুনো বিশেষ বিষয় নোয়ায়।
এই রাজবংশীলা এই অর্থত (অর্থাৎ প্রচলিত অর্থৎ )
ব্রাত্য হইলেও ক্ষত্রিয়।
‘ভবদেব পদ্ধতি‘ মততও সঠিক সমায়ত
ব্রহ্মচর্য্য ব্রত না নিলে উয়ার সাবিত্রী পতিত হয় অর্থাৎ মানষিটা পতিত হয়; এবং প্রায়শ্চিত্ত করি পইতা
নেওয়া খায়।৫ পৈতা না নিলে অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য্য ব্রত না নিলে তায়
বেদ পড়ির না পায়। বেদ পড়ির গেইলে ব্রতগ্রহণ করা নাগে অর্থাৎ পৈতা নেওয়া নাগে, যে
বামুন বেদ গ্রহণের বাদে পৈতা নাই নেয় উয়ার দ্বারা কোন কর্ম হয় না, উমাক দেওয়া
হব্যদ্রব্য রাক্ষসে ভোজন করে।৬
সুতরাং ‘বেদহীন‘ অভিধা এঠি আন অর্থ উবায় যা প্রচলিত অর্থৎ বুঝায়, উয়ার থাকি
দোসরা। প্রচলিত অর্থৎ প্রচার করি করি সেই প্রচলিত অর্থক আরো ডাটিয়াল করা হয় যে,
রাজবংশীলা বেদহীন। অর্থাৎ বৈদিক নোয়ায়, আর্য্য নোয়ায়। এই বিভ্রান্তিকর অনৈতিহাসিক
প্রচারে ইতিহাসক বিকৃত করে, স্বার্থলোভী সমাজ নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে।
এইবার দেখি মনুসংহিতাত দুতিয়া অধ্যায়ের উপরাত উল্লিখিত উদ্ধৃতির (৩৯ শ্লোক)
সঠিক বা আক্ষরিক সংস্কৃত অর্থ ব্যাখ্যা কী। ইয়ার বাংলা অনুবাদ যা করা হইছে, সেইটা হইলেক:–
“এই তিন বর্ণের মানুষ যদি উক্ত উপনয়নকালের মধ্যেও সংস্কৃত না
হন তা হলে তাঁরা উপনয়ন ভ্রষ্ট হয়ে আর্য সমাজে নিন্দনীয় হন এবং তাদের ব্রাত্য
বলা হয়”।
উক্ত
উদ্ধৃতির দুতিয়া সারি (সাবিত্রিপতিতা ব্রাত্যা ভবন্ত্যার্যবিগর্হিতা:)–এর অর্থ কেমনু
করি হয়, “তাদের ব্রাত্য
বলা হয়”! যায় সমায় মতো ব্রহ্মচর্য গ্রহণ না করে উয়ার সাবিত্রি পতিত
হয়। আর যায় ব্রত গ্রহণ করে তায় ‘ব্রাত্য’। এঠি ‘ব্রাত্যা‘ মানে ‘ব্রতধারী’, ‘ব্রহ্মচারী’ বা যায় ব্রত নেয়– এইটায় বুঝায়; ‘ব্রতচ্যুত‘ অর্থৎ ‘ব্রাত্য‘ নোয়ায়। ‘হীন‘ বা ‘চ্যুত‘ হওয়া অর্থৎ ‘পতিত‘ বুঝাইলে ফির আর একবার ‘চ্যুত‘ বা ব্রতচ্যুত বুঝাবে ক্যা? পৈতা–গ্রহণ ব্রতক সাবিত্রি
ব্রত(উপনয়ন ব্রত) কওয়া হয়। উপনয়ন ব্রত থাকি চ্যুত হওয়া মানে সাবিত্রি(গায়ত্রী)
পতিত হওয়া; ফির ‘ব্রতচ্যুত‘ বিশেষণ বাক্যত আসিবে ক্যা? এই বাদে উক্ত বাক্যর অর্থ হবে– ‘যার সাবিত্রি(উপনয়ন
ব্রত) পতিত হয় তায় সমাজত গর্হিত
অবস্থাপ্রাপ্ত হয়”। সুতরাং উপরার অর্থ ব্যাখ্যাত ব্যাকরণগত কণেক ভুল আছে বুলি
মনে কয়। আর এই
ভুল নিয়ায় প্রচলিত ব্রাত্য ব্যাখ্যার যাত্রা সূচুনা।
‘মেধাতিথিভাষ্যসমলঙ্কৃতা মনুস্মৃতি‘ত–ও একে পুছারি আইসে।
মনুসংহিতার ব্রাত্য সম্পর্কৎ উক্ত শ্লোকের ভাষ্য দেওয়া আছে:
‘অস্মাত্কালাদুর্ধং পরেণ
ত্রয়োহপ্পেতে বর্ণা: ব্রাহ্মণাদয়ো যথাকালং যস্যোপনয়নকাল:
তত্রানুকল্পিকেহপ্যসংস্কৃতা অকৃতোপনয়না: সাবিত্রীপতিতা উপনয়নভ্রষ্টা ভবন্তি। ব্রাত্যাশ্চ
সংজ্ঞয়া।
এঠি
কওয়া আছে যে, তিন বর্ণের মানষি যায় সমায় কালত উপনয়ন না নেয় উয়ার সাবিত্রী পতিত হয়া
উপনয়ন ভ্রষ্টা হয়। উপরাৎ “অস্মাত্কালাদুর্ধং ……………..ভবন্তি’’ পর্যন্তক উয়ার অর্থ ভাষ্য ঝলঝলা। সুতরাং ইয়ার পাছত নীচৎ দাগ
দেওয়া ‘ব্রাত্যাশ্চ
সংজ্ঞয়া‘ অতিরিক্ত বুলি মনে কয়। পাছিলার সংযোজন(প্রক্ষেপ)–ও হবার পায়।
হিন্দি
মনুস্মৃতিতও ঐ নাখান লেখা আছে: “ইস্ কালকে বাদ, য়ে তিনো, সময় মে সংস্কার না হোনে সে
সাবিত্রীপতিতো ‘ব্রাত্যা‘ নামক হো জাতে হেঁ অৌর শিষ্টোঁ সে নিন্দিত হোতে হেঁ”।৭ সুতরাং এটিও ‘ব্রাত্যা‘ শব্দর ভুল ব্যাখ্যা আছে বুলি মনে কয়। সংস্কৃত অভিধানত
‘ব্রাত্যা‘ মানে– সন্যাস জীবন [ সম্ভাষণসংস্কৃতম্ শব্দকোষ ]। সুতরাং ‘ব্রাত্যা শব্দক দিয়া সন্যাসী অর্থাৎ যা সন্যাসী হবার ধরিছে
উয়াক বুঝাইছে।
এইছাক
ভবদেবপদ্ধতি থাকি একটা উদ্ধৃতি আলোচনা করি যা থাকি ‘ব্রাত্যা‘ মানে ব্রতচ্যুত নোয়ায় সেইটা
বোঝা যাবে আরো ভাল করি:
“তত্র গর্ভাষ্টমেহষ্টমে বাব্দে ব্রাহ্মস্যোপনয়নং কর্তব্যম্। তদসম্ভবে
ষোড়শবর্ষপর্য্যন্ত–মুপনয়নাধিকার: অত: পরং
সাবিত্রীপতিতো ব্রাহ্মণো নোপনেতব্য: ইতি”।৮
উপরার দাগ দেওয়া শব্দটা(অত: পরং সাবিত্রীপতিতো ব্রাহ্মণো নোপনেতব্য)
মনুসংহিতার উদ্ধৃতির ‘ব্রাত্যা‘ বাচক। ব্রাহ্মণের ছাওয়া গর্ভকাল থাকি অষ্টম বর্ষ সময়ত উপনয় কর্তব্য। অসম্ভব
হইলে (গর্ভকাল থাকি) ষোল বছর তক উপনয়ন হবার পায়। কিন্তুক ইয়ার পাছত ব্রাহ্মণের
সাবিত্রী পতিত হয়; আর উপনয়নের অধিকার না থাকে। আর এই নাখান করি ক্ষত্রিয়র বেলাত কবার গেইলে
নির্দিষ্ট সমায় পার হইলে ক্ষত্রিয়র সাবিত্রী পতিত হয়; পৈতাত আর অধিকার না
থাকে। আর ঐ ঢক করি মনুসংহিতার উদ্ধৃতিতও ‘ব্রাত্যা‘ মানে ব্রতধারী বা ব্রহ্মচারী (ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়)।
ভবদেবপদ্ধতির উক্ত শ্লোকের পাছের শ্লোক– “ তত্র প্রথমং পিতা পিত্রা বৃতোহন্যো বা আচার্য্য: সমুদ্ভবলমানমগ্নিং সংস্থাপ্য
মাণবকম অগ্নেরুত্তরতো নীত্বা, শিখয়া সহ মুণ্ডিতং স্নাপিতং
কুণ্ডলাদ্যলঙ্কৃতং, ক্ষৌমবাসসাবৃতং তদসম্ভবে শুক্লাহতকার্পাসৈকবস্ত্রাবৃতং
স্বদক্ষিণে পূর্বাভিমুখং নিধায়, প্রকৃতকর্ম্মারম্ভে প্রাদেশপ্রমাণাং ঘৃতাক্তাং
সমিধং তুষ্ণীমগ্নৌ হুত্বা ব্যস্তসমস্তমহাব্যাহৃতিহোমং”।
পতিতসাবিত্রী(যার সাবিত্রী পতিত হইছে)–র পৈতা নিলে প্রায়শ্চিত্ত
করা খায়। আর পইতা গ্রহণের আগত ব্রহ্মচারীক কওয়া হয় ‘মাণবক‘( সাধারণ বালক)। যার বেদত অধিকার নাই হয় এলাও, বা উপনয়ন নাই
হয়, উয়াক ‘মাণবক‘ কওয়া হয়–[ ‘অনৃচো মাণবকো জ্ঞেয়:”]। এই বাদে এই মাণবক–এ ব্রতগ্রহণের
আগের ব্রাত্য। সুতরাং এই মাণবক–এর বা ব্রাত্যর (বামুন হউক, ক্ষত্রিয় হউক) সাবিত্রী পতিত
হইলে সমাজত গর্হিত অবস্থাপ্রাপ্ত হয়। আর এই পতিত অবস্থা থাকি উদ্ধারের উপায় ‘চান্দ্রায়ণব্রত‘ বা ‘ব্রাত্যস্তোম যজ্ঞ”। ‘চান্দ্রায়ণ ব্রত্‘ মানে একচন্দ্রকাল
ধরি বিশেষ এক উপবাস–ব্রত। আর ‘ব্রাত্যস্তোম‘–এর ব্যাকরণগত অর্থ হয় ‘ব্রত সম্পর্কীত স্তুতিযজ্ঞ‘(ব্রতর স্তুতি যজ্ঞ, বা ব্রাত্যর স্তুতি যজ্ঞ); ‘পতিত অবস্থা মোচন যজ্ঞ‘ নোয়ায়। সুতরাং
এটা ঝলঝলা হবার ধরিছে যে, ‘ব্রাত্য‘ মানে ‘ব্রতচ্যুত‘ নোয়ায়। ব্রত মানে কৃচ্ছসাধনী ধর্মাচরণ যা মন আরো শরীকক পরিশুদ্ধ করে। এই বাদে
‘ব্রত‘ মানে পরিশুদ্ধকারি বা পতিত উদ্ধারি ধর্মাচরণ। ‘পতিতউদ্ধারি‘(পতিত উদ্ধারকারক) নামত কুনো দোসরা ব্রত নাই। ‘ব্রাত্যস্তোম‘ মানে ‘ব্রাত্যত্ব মোচন যজ্ঞ‘– কথা গোটালে ভুল
বুলি–ই মনে কয়।
পৈতা গ্রহণের সমায় ব্রতচারীক পেন্দা হয় ‘মেখলা‘(কটিবন্ধ)। এই প্রাচীন
কটিবন্ধ মেখলা কমোর ঘেরা এক পোশাকত পরিণত হয়; আর সেই পোশাক এলাও আসামত ব্যাবহৃত। বৈদিক
করতোয়া সভ্যতার মেখলিগঞ্জত এলাও মেখলা তৈয়ার হয়। ব্রাত্যক(ব্রহ্মচারীক) পেন্দা হয়
কৃষ্ণসারের(কালা হরিণের) চামরা। এই কালা হরিণ বেশী পাওয়া যায় কামরূপতে। পাছত ধীরে ধীরে চল হয়(বংশগত
ব্রাহ্মণ তৈয়ার হইলে) ব্রাহ্মণের বাদে কালা হরিণের চামরা আর ক্ষত্রিয়র বাদে গেরুয়া
হরিণের চামরা; বা আরো পাছত ‘কার্পাসবস্ত্র”। মনু সংহিতাতে
কওয়া আছে–পশ্চিম সমুদ্র
থাকি পূর্ব সমুদ্র আর্যাবর্ত এবং কৃষ্ণমৃগর যেঠি চরে সেঠি যজ্ঞদেশ–[‘আসমুদ্রাত্তু বৈ
পূর্বাদ্ আসমুদ্রাত্তু পশ্চিমাৎ।/তয়োরেবান্তরং গির্যোরাবর্তং বিদুর্বুধা:।। কৃষ্ণসারস্তু
চরতি মৃগো যত্র স্বভাবত:। স জ্ঞেয়ো যজ্ঞিয়ো দেশো ম্লেচ্ছদেশোস্তত: পর:।৯ সুতরাং মনুসংহিতা ভুল নাই কয়;
ব্যাখ্যায়কারীরঘর বিকৃতকারী। এমুন কি মনুসংহিতা পাছতও বর্মণ রাজবংশ ভগবৎ ধর্মী এবং ব্রাহ্মণ্য বাদের অনুসারী
বুলি স্বীকৃত[ দেখো–––ব. রা–9.0];এবং ভাস্করবর্মা আর্য্যধর্মালোকের সূর্য্য [নিধনপুর শিলালিপি]।
কৃষ্ণসারের চামড়া পেন্দার পাছত ব্রহ্মচারীক যজ্ঞোপবীত পেন্দে দেওয়া হয়। মিত্র
আরো বরুণের নাখান তেজস্বী হওয়ার বাদে মিত্র আরো বরুণের নামত মন্ত্র কয়া। এই
মিত্রাবরুণ অতি প্রাচীন কালের ক্ষত্রিয় ব্রাত্য বা আধ্যাত্ম। ইমরা রাজবংশী সমাজের
মিতর পানিছিটা।
আজি
বৈদিক ইতিহাসের বহুকাল পাছত ‘ব্রহ্মচারী‘ শব্দটা শুনিলে বংশগত ব্রাহ্মণের কাথা মনত
আইসে; আসলে ব্যাপারটা উল্টা– সৌগে ক্ষাত্র ব্রাত্য বিষয়। আর মিত্র, বরুণ, ইন্দ্র, যম,
ঈশান(শিব), ভব(শিব),বিষ্ণু– ইমরা সগায় ক্ষত্রিয় ব্রাত্য বা আধ্যাত্ম। ইমার দেবতায়ণ
হইছে; বিষ্ণুর হইছে (ইন্দ্রব্যক্তিত্বরূপী)ঈশ্বত্ব এবং শৈবায়ন(হরি হর)।
পৈতা
গ্রহণের যা মন্তর সৌগে ইন্দ্র, বায়ু,
জল, সূর্য, অগ্নি,
বরুণ, চন্দ্র–এর প্রশস্তি।
বিকৃত ইতিহাসক রোধ করির গেইলে বেদ আরো বৈদিক সাহিত্যর ফিরতি পাঠ দরকাল। পুরাণের কাহিনী দিয়া কামরূপের বৈদিক ইতিহাসক বিকৃত করিছে,
সেইটা পতিরাম সিনহা উমরা উমার ‘কামতা রাজ্যে পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয়‘ গ্রন্থত কয়া গেইছে।
অষ্টাদশ খ্রীষ্টাব্দত ম্যাক্সমুলার যে বেদ পাঠ করি আর্য্য-অনার্য্য অভিধার সিজ্জন করিছে, সেইটার ফিরতি মূল্যায়ন দরকাল। Medes থাকি magic শব্দর উপজন। ল্যাটিন magicas, গ্রীক- magus or
magos ; Old Persian- magus. আর এই magus থাকি magic or
magi(ম্যাজাই, পণ্ডিত)।১০ এই magi(ম্যাজাই) or Median-এর ঘর জ্যাোতিষ তথা অধিভৌতিক, আধ্যাত্মিক বিদ্যার অধিকারী। ইমার বাদে গোটায় দুনিয়ার জ্যোতিষবিদ্যা, গণিত শাস্ত্রর উন্নতি।১১ জ্যোতিষ বিজ্ঞানী জ্যাঁ সিলভা বেইলীর মন্তব্য:- The motion of the stars calculated by the Hindus before some
4500 years vary not a single minute from the tables cassine and meyer used in
the 19th century. ১২ বেদের সঠিক ব্যাখ্যা না করি বেদের কাল নির্ণয় করা সম্পর্কত লেখক মুক্তি মিত্র মন্বত্য করিছে_ ‘----------গোচরীভূত হলে দেখা যাবে একটি সুপ্রাচীন সভ্য জাতির ইতিহাসে কি পরিমান যথেচ্চাচার সংঘটিত হয়েছে এবং ইতিহাস নামে যার পঠনপাঠন অব্যাহত তা কিছু ব্যাক্তির উদ্দাম কল্পনা মাত্র’’।১৩ সেই নাখান কামরূপ-কামতার রাজবংশী সংক্রান্ত যে ইতিহাসের অপ্রচার, সেইলা কিছু মানষির অদভূয়া কল্পনা এবং “ইচ্ছাকৃত জুয়াচুরি ছাড়া আন কোনো না হয়”।১৪ মুক্তি মিত্র আরো কইছে- ‘বেদ সম্পর্কে শুধু পাশ্চাত্য নয় ভারতবর্ষের পণ্ডিতদের পল্লবগ্রাহীতায় অদ্ভূদ সব তত্বের জন্ম হয়েছে। ১৫ রাজবংশী বা কামরূপ-কামতার ইতিহাসের ব্যাপারোতো কিছু ব্যাক্তির ঐ এ্যাকে পল্লবগ্রহীতা আরো অজ্ঞতা দেখা যায়।
মনুসংহিতা আরো ব্রাহ্মণ্যবাদ:[ ম. ব্রা.- 3.0]:
মনুসংহিতা ব্রাহ্মণ্য ধর্মর এক বিধান গ্রন্থ।১৬ ইয়ার সংকলন হয় দুতিয়া খ্রী:
পূ:। ইয়ার পাছত হয় নানান সংযোজন আরো প্রক্ষেপন । আর ব্রাহ্মণ্যবাদ কোনো ধর্ম নোয়ায়। আদি বৈদিক ধর্ম দুই নাখান- শৈব(বা শাক্ত শৈব) এবং বৈষ্ণব। পুরোহিত শ্রেণীর মানষির বংশগত অধিকারতন্ত্রয় ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র নাম নেয়। ইয়ার সিজ্জন আলোচ্য ‘ব্রাত্য’ বা ‘আধ্যাত্ম’ সাধন ধারা থাকি বংশগত উন্মাষিকতার রূপ হিসাবত। সয়ম্ভু মনু থাকি বৈবস্বত মনু-
এই চৌদ্দজন মনুর সগায় মিডিজ, বাহ্লিক, কম্বোজ, পার্সিয়ান, পার্থিয়ান।
Indo-Iranian and Aryan- এই অভিধার দুইযের
Indo-Iranian-লায় আসল আর্য্য। আর ব্রাহ্মণ্য জ্ঞাপক Aryan অভিধার উপজন অর্বাচীন কালের। ব্রহ্মণ বা ব্রহ্মণস্পতি (ব্রাত্যব্রহ্মণস্পতি, প্রজাপতি) থাকি ব্রাহ্মণ শব্দর উপজন। মনুসংহিতা এই ব্রাহ্মণ্যবাদের( বংশগত ব্রাহ্মণের) বিধানগ্রন্থ; আর্য্য হিন্দু ধর্মর নোয়ায়। এটা বর্ণবাদী নয়া সংস্করণমাত্র, যাক ব্রাত্য বা আধ্যাত্ম ধারার ধর্ম ইতিহাসের পাছিলা বিবর্তন কওয়া যায়, যে বিবর্তনের মূল পৃষ্টপোষক ব্রাত্য এবং ব্রাত্য ক্ষত্রিয়র উপনিষদি ব্রহ্মবাদ এবং ভক্তিবাদ বা ভগবত ধর্ম অর্থাৎ বৈষ্ণব ধর্ম।
বৈদিক যুগত কুনো বর্ণ বিভাগ আছিল না। যায় ধর্মব্রত পালন করে তায় ব্রাত্য।
ইমরা ক্ষত্রপ, বা ক্ষত্রপতি। সেই থাকি ক্ষত্রিয়। এই ক্ষত্রিয় ব্রাত্যাধিপতি থাকি ‘ব্রহ্মণ‘ এবং সেই থাকি ব্রাহ্মণ গুষ্টির সিজ্জন। আর এই ক্ষত্রিয় আরো
ব্রাহ্মণ গুষ্টিই আর্যধর্মর ধারক–বাহক। গীতাত যে চতুর্বর্ণ সেইটা ‘গুণকর্ম বিভাগশ:‘। বিশ্বামিত্র
মুনি ক্ষত্রিয় থাকি বামুন হয়। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। পাছত আর কুনো ক্ষত্রিয় বামুন
হবার নাই পায়। বংশগত বামুন গুষ্টি আর কাহকো নাই মানে। এমুনকি যে– ব্রাত্য বংশ থাকি বা ধারা
থাকি বামুন হয়, সেই ধারাকে পাছত ‘ব্রতচ্যুত‘ প্রচার করে।
বৈদিক যুগের
শ্যাষত বংশগত ব্রাহ্মণ্য সমাজের সিজ্জন সম্পন্ন হইলে আধিপত্য বাড়ি যায় এবং ধর্ম এক
কঠোর নিয়ম সর্বস্ব ব্যবস্থাত পরিণত হয়; মানষি মুক্তি উটকায়।১৭ জৈন আরো বৌদ্ধ ধর্মর সিজ্জন হয়। বৈদিক হিন্দু ধর্ম বৌদ্ধ আরো জৈনর সাথত নড়াই করি ক্ষত্রিয় উপনিষদি দর্শনোত তৈয়ার করে ভগবত ধর্ম। রামায়ণ আরো মহাভারত রচিত হয় (৪০০ খ্রী: পূ:- ২০০ খ্রী:
পূ:)। রামায়ন মহাভারত ক্ষত্রিয় ঐতিহ্য প্রধান। বামুনলা ঐ সমায় ভগবত দর্শণের ধারা অনুসরণ করি গঠি তোলে নিজস্ব প্রাধান্য। তৈয়ার করে মনুসংহিতা। মনুসংহিতা বিষয়টা ভাল করি বুঝির বাদে ঐ সমায়কালের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা বিচার করা করা দরকাল: We must take into consideration the condition
of the world at the time when Manu wrote between 200 BC and 200 AD. ১৮ মনুসংহিতার
সমাজচিত্র কুষাণ যুগের।১৯ এই সমায় কোন মনু নাই,
ইন্দ্র নাই,
ব্রাত্য প্রজাপতি নাই, নাই সপ্তর্ষি। বৈদিক যুগ ভালদিন আগতে শ্যাষ হয়া ঐতিহাসিক যুগ সুচূনা হইছে ভালদিনে। আরো উল্লেযোগ্য যে, মনু সংহিতাত দশজন ঋষি যথা মরিচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত, পুলহ, কতু, প্রচেতা, বসিষ্ট, ভৃগু এবং নারদ – ইমার জাত পরিচয় দেওয়া নাই হয়।২০ কওয়া যায় যে, ঐ ঋষিলা আর্য্য সভ্যতার বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং বাহ্লিক, কম্বোজ, মিডিস, পার্সিয়া, পার্থিয়া ইত্যাদি বংশর। বামুনলাও নির্দিষ্ট কোনো বংশর নোয়ায়। ব্রাত্য বা আধ্যাত্ম ঋষিলার বংশগত ঢক মাত্রক। মনুও কোনো নির্দিষ্ট
বংশর নোয়ায়। স্বয়ম্ভু মনুক ব্রহ্মার পুত্র কওয়া হয়, তাও সেই ব্রাত্য বা আধ্যাত্ম ধারার নগত সম্পর্কিত। দুতিয়া মনু সরোচিচ আন বংশর। সরোচিচ মনুর তিন বেটা বিজয়, মেরুনন্দ এবং প্রভাব: “In the east he
(Sarachi) founded Vijaypur on the
Kamrupa Mountain and his son Vijay became its Prajapati. ২১
তবে পরমেষ্ঠি কাশ্যপের বংশ থাকি বেশী মনু হয়। শেষুয়া ১৪ নং মনু বৈবস্বত মনু পরমেষ্ঠি কাশ্যপের নাতি।২২ এই বাদে কওয়া যায় যে, মনুসংহিতার বর্ণ বা জাতি বিভাগ বৈদিক নোয়ায়। ব্রাত্যলা ব্রতময়; ব্রতচ্যুত নোয়ায় এবং বংশগত বামুনের কঠোর নিয়মের বায়রা ভগবত ধর্মক প্রতিষ্ঠা করি সরাসরি বিষ্ণুর দাস হয়। ভগবত ধারার সাথত ব্রাহ্মণ্য ধারার এই পার্থক্য। কিন্তুক শেষোত ভগবত ধর্মক ভালেখান আত্তিকরণ করিয়া প্রাধান্য বিস্তার করিছে সেই
ব্রাহ্মণ। প্রচলিত ইতিহাসত চাপা পড়িছে বৈদিক ব্রাত্য ইতিহাস।
মনুসংহিতা ফাইক ক্ষেত্রত বেদহীন। বামুন মানষির
নিজের ক্ষমতাতন্ত্রক কায়েম করির বাদে তৈয়ার।
মনুসংহিতার সূচুনা হয় নানান বর্ণর মানষির প্রতিলোমজ বা অনুলোমজ সন্তানের
ধর্মাচরণ বা সামাজিক অবস্থান কি হবে, সেই পুছারি নিয়া।–(অধ্যায় এক, পৃ– ৪৫)। এটা একটা
অর্বাচীন বৈদিকোত্তর সামাজিক বিষয়। তবে অদভুয়া বিষয় এই যে, গ্রন্থখান পুছারির
উত্তর দিয়া সূচুনা না হয়া ‘সৃষ্টিতত্ব‘ দিয়া সূচুনা হৈলেক। আর যে– পুছারির ভিটিত গ্রন্থর
সূচুনা সেই পুছারি গেইলেক একেবারে পাছের অধ্যায়লাত ; বিশেষ করি দশম
অধ্যায়ত(সামাজিক ধর্ম) যেঠি ক্ষত্রিয় আরো বৈশ্যর বেদাধ্যয়ন অধিকার অবৈদিক ভাবত
কাড়ি নেওয়া হইলেক। মনুসংহিতা এই বাদে একটা গোজামিল প্রক্ষেপন মাত্র। নাইলে বৈদিক ঋষি
মেধাতিথির ‘মনুস্মৃতি‘–ত কেমুন করি অবৈদিক অর্বাচীন বিষয়লা সোন্দায়!